পটভূমি-
• স্বাধীনতার পর (১৯৭১) বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত।
• মানুষসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, বন্যা–খরা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট চলছিল।
• ভেতরে সহিংসতা: জাসদ ও চীনপন্থীদের অগ্নিসংযোগ, ব্যাংক লুট, পুলিশ হত্যা, অস্ত্র লুট।
বঙ্গবন্ধুর ধারণা
• বঙ্গবন্ধু বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব বলেছিলেন।
• প্রথম বিপ্লব = মুক্তিযুদ্ধ → রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
• দ্বিতীয় বিপ্লব = অর্থনৈতিক মুক্তি → সহযোগী কৃষিকাজ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, জাতীয় ঐক্য।
বাকশাল কী
• পূর্ণ নাম:
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।
• সংস্থা:
আওয়ামী লীগ + ন্যাপ (মুজাফফর) + কমিউনিস্ট পার্টির ঐক্য। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী সবার জন্য উন্মুক্ত রাজনৈতিক সংগঠন।
• লক্ষ্য:
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, কৃষক–শ্রমিকের অধিকার, দুর্নীতি রোধ, ন্যায্য সম্পদ বণ্টন।
বাকশালের পক্ষে-বিপক্ষে
বাকশালের পক্ষে (১৯৭৩ নির্বাচনের ভিত্তিতে)
• আওয়ামী লীগ: ৭৩.২%
• ন্যাপ (মুজাফফর): ১.৫%
• সিপিবি: ১%
= মোট প্রায় ৭৬% ভোটারের সমর্থন
বাকশালের বিপক্ষে
• ন্যাপ (ভাসানী): ০.৭%
• জাসদ: ৩.৪%
• কিছু স্বতন্ত্র
= মোট প্রায় ৪–৫% ভোটারের সমর্থন
৯৮% আসনে নির্বাচিত (৩০০ এর মধ্যে ২৯৩ আসন) হবার পরেও বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের এমন ব্যবস্থা ইতিহাসে বিরল।
টাইমলাইন
• স্বাধীনতা: ১৯৭১
সংকটকাল: ১৯৭২–৭৪
• বাকশাল পরিকল্পনা ঘোষণা: ২৬ মার্চ ১৯৭৫
• কার্যকর হবার কথা: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
বাকশাল বাস্তবায়নের আগেই শেষ হয়ে যায়।
বাকশালের কাঠামো ও পদ্ধতি
জনগণ (ভোটার)
গ্রাম সমবায় পরিষদ (ভোটে নির্বাচিত)
থানা পরিষদ / প্রশাসক (ভোটে নির্বাচিত)
জেলা গভর্নর (ভোটে নির্বাচিত)
জাতীয় সংসদ (প্রতিটি আসনে বহু প্রার্থী → জনগণের ভোটে নির্বাচিত)
প্রেসিডেন্ট (জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত)
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
• দেশকে ছোট ছোট সেল/ইউনিটে ভাগ করা।
• প্রতিটি ইউনিটে কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের হাতে ক্ষমতা।
• প্রশাসক: জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতা, সহযোগী হিসেবে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি।
জেলা ও থানা প্রশাসন
• প্রতিটি জেলায় একজন গভর্নর, প্রতিটি থানায় একজন প্রশাসক/চেয়ারম্যান।
• এরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন।
রাজনৈতিক কাঠামো
• জাতীয় সংসদে জনগণ ভোট দিয়ে বাকশাল প্রার্থীদের মধ্যে থেকে বেছে নিত।
• প্রেসিডেন্ট জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন।
• সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ অনাস্থা দিলে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা যেত।
অর্থনৈতিক কাঠামো
• সমবায় কৃষিকাজ চালু।
• ভূমিহীন কৃষককে জমি প্রদান।
• বড় শিল্প, ব্যাংক, পরিবহন, বৈদেশিক বাণিজ্য জাতীয়করণ।
• সীমিত ব্যক্তিমালিকানা থাকলেও শোষণ রোধ।
প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা
• আমলাতন্ত্র ছোট করা।
• সুপ্রিম কোর্ট ঢাকায়, হাইকোর্ট ৮ অঞ্চলে ভাগ।
• প্রতিটি থানায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল → ৩–৬ মাসে মামলা শেষ।
• ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে গ্রামে শালিস বোর্ড (মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, গণ্যমান্যরা)।
গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার
• জনগণের সরাসরি ভোট →
প্রেসিডেন্ট, সংসদ, গভর্নর, প্রশাসক সবাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত।
• এক প্ল্যাটফর্ম, বহু প্রার্থী →
প্ল্যাটফর্ম এক হলেও প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী দাঁড়াতো, জনগণ বেছে নিতো।
• ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ →
গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ধাপে ধাপে জনগণের প্রতিনিধিত্ব।
• ৯৫% মানুষের শাসন →
আগে ৫% ধনী মানুষ শাসন করতো, বাকশাল ৯৫% দরিদ্র জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল।
এক কথায়
বাকশাল = জাতীয় ঐক্যের গণতন্ত্র → এক দল হলেও বহুপ্রার্থী, জনগণের ভোটাধিকার, বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসন।
পদ্ধতিগতভাবে এটি ছিল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বৈপ্লবিক সমন্বয়।
সংগৃহীত
@Chowdhury Jhorna ওয়াল থেকে
0 Response to "বাকশাল কী? আসুন জানি বাকশাল সম্পর্কে"
Post a Comment